অ্যামেচার রেডিও এবং লাইসেন্সঃ কি? কেন? কিভাবে?
অ্যামেচার রেডিও এবং লাইসেন্সঃ কি? কেন? কিভাবে?
অ্যামেচার রেডিও বলতে মুলত একটি নির্দিষ্ট রেঞ্জ এর রেডিও ফ্রিকুয়েন্সি ব্যবহার করে কথা বলা, বিভিন্ন রকম পরীক্ষা নিরিক্ষা, স্কিল ডেভেলপ করা, ব্যাক্তিগত সৌখিন উদ্ভাবন, রেডিও কমিউনিকেশন সংক্রান্ত কম্পেটিশন বা কন্টেস্ট এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ইমারজেন্সি সিচুয়েশন এ যোগাযোগ বজায় রাখাকে বোঝায় যা অবশ্যই অবাণিজ্যিক এবং অবৈতনিজ।
এই খাটখট্টা সংজ্ঞা গোত্রীয় কথা বার্তা হয়তো ভালও লাগছে না বুঝতেও পারছো না, তাই না? যদি তা না হয় তবে খুব সম্ভবত এই লেখা তোমার জন্য না।
তোমরা হয়তো পুলিশের কাছে এক ধরনের বিশেষ মোবাইল দেখেছ, যা দিয়ে খুস্খুসে আওয়াজে তারা কথা বলে। অথবা রাত জেগে এফএম রেডিও শুনেছ। এই যে এক জায়গা থেকে হাওয়ায় হাওয়ায় উড়ে উড়ে কথা গুলো আরেক প্রান্তে চলে যাচ্ছে, নিশ্চয় প্রশ্ন জেগেছে কিভাবে যায়? আসলে আমারা যখন সাথে বন্ধুর সঙ্গে কথা বলি সেটা আর এই সব কিন্তু একই রকম ভাবে কাজ করে। আমাদের কথা যেমন তরঙ্গ আকারে আরেকজনের কাছে পৌঁছায় তেমনিভাবে রেডিওর কথা গুলোও তরঙ্গ আকারে পৌঁছায়। পার্থক্য কেবল এই তরঙ্গের মাত্রায়। পৃথিবীর সব ধরনের বেতার যেমন আলো থেকে শব্দ, মোবাইল টেলিফোনের কথা থেকে ওয়াকি-টকি, ব্লুটুথ থেকে ওয়াই-ফাই সব কিছুই তরঙ্গ আকারে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পৌঁছে যায়। চমৎকার একটা বেপার না? পৃথিবীর সবই তরঙ্গ এর মতন?
একদল মানুষ আছে যারা এই সব বিষয় নিয়ে ভাবতে ভালবাসে। তারা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন টেকনোলজি আবিষ্কারে নেশায় ডুবে থাকে। তাদের এই পবিত্র নেশার ফলাফলই কিন্ত আজকের এত সব কিছু। তাদের সাথে আছে আরেকটি দল, যারা শখের বসে কাজ করে। তারা সাধারণ মানুষ। ব্রেকফাস্ট করে কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে যায়, স্যারের বকা খায়। কিন্তু তাদের মধ্যে আছে সৃষ্টিশীলতার ঝোঁক। তারা আকাডেমিক পড়াশোনার ফাকে রিতিমত গবেষণা করে। তাদের জন্যই অ্যামেচার রেডিও। তাদের এই সৌখিন গবেষণার একটা প্লাটফর্ম হচ্ছে অ্যামেচার রেডিও।
এই সকল সখের বশে বিজ্ঞানি বনে যাওয়া মানুষদের জন্য জায়গা করে দেয়া হয়েছে। তাদের জন্য রয়েছে পৃথিবী জুড়ে বিশাল এক কমিউনিটি। বছর বছর না না রকম কম্পিটিশন হয়, পৃথিবীর এই কোনা অই কোনা থেকে সৌখিন বেতার বিজ্ঞানিরা জর হয় একসাথে। সারা বছর তারা রেডিও দিয়ে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখে। একে অন্যকে প্রচন্দ ভালোবাসে। এমনকি একজনের এলাকায় কোন সমস্যা দেখা দিলে যেমন প্রচণ্ড বন্যা হলে অথবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ এ তারা সবাই মিলে একসাথে কাজ করে। তারা যোগাযোগ করে কিন্তু রেডিও মাধ্যমেই।
এই সকল সখের বসে যারা ভলান্টিয়ারিং করে তাদের কে হ্যাম নামে ডাকা। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, সবাই কিন্তু ইচ্ছে করলেই রেডিও নিয়ে কাজ শুরু করতে পারে না। রেডিও নিয়ে কাজ করতে বা রেডিও তে যোগাযোগ করতে অবশ্যই চাই সরকারের অনুমদন জাকে বলে অ্যামেচার রেডিও লাইসেন্স বা হ্যাম লাইসেন্স।
এখন হয়তো জানতে ইচ্ছে করছে হ্যাম হলে ফায়দা কি?
হ্যামদের কিন্তু অনেক সুবিধা। যেমন ধর,
- তোমার বন্ধু এবং তুমি দুইজনেই হ্যাম। কালকে তোমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করবে অথবা একটা বিষয়ে ডিসকাশন করা প্রয়োজন। অথবা নিতান্তই হাল্কা ধরনের গল্পগুজবের জন্য তোমরা যখন ফোনে কথা বল তোমাদের সেজন্য টাকা খরচ হয়। কিন্তু যেহেতু তোমরা দুজনেই হ্যাম, তোমরা কথা বলবে রেডিও তে। তোমাদের কোন খরচ নাই। কি মজা না? এই রকম যোগাযোগ এর জন্য কিন্তু তোমাদের এক এলাকা বা এক শহরে থাকার প্রয়োজন নাই। তোমরা যদি অনেক দুরের দুই দেশেও থাকো, তাতেও কোনো সমস্যা নাই।
- বিভিন্ন স্যোসাল মিডিয়াতে তোমরা যেমন নতুন নতুন বন্ধু বানাও, ঠিক তেমনি রেডিও মাধ্যমে তোমরা দেশ-বিদেশে নতুন নতুন বন্ধু বানাতে পারবে।
- হঠাত কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিনবা রানা প্লাজা ধসের মত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস বা ডিফেন্স কে তুমি সরাসরি সহায়তা করতে পারবে। দেশের সেবা কিন্তু সবচেয়ে বড় বেপার। সবাই পারে না।
এইরকম আরো অনেক অনেক সুবিধা পেয়ে থাকে হ্যাম রা।
আচ্ছা, তোমাদের কি জানতে ইচ্ছে করছে না যে একজন হ্যাম আরেকজন হ্যাম এর সাথে যখন কথা বলে তখন কিভাবে নিজেদের চেনে? নাম দিয়ে এই কাজ টা করাই যেতে পারতো কিন্তু পৃথিবীতে নামের বড়ই অভাব। এক নামের মানুষ যেমন এক দেশেই অনেক আছে তেমনি বিভিন্ন দেশেও আছে। তাই প্রত্যেক হ্যাম এর আছে একটা ইউনিক নাম জেটাকে বলা হয় কল-সাইন। কল সাইন ব্যাবহার করে একজন আরেকজন হ্যাম কে ডাকে, পরিচয় দেয়। এই কল সাইন নিয়ে আরেকদিন বিস্তর আলোচনা করবো ইনশাল্লাহ। তারচেয়ে বরং বাংলাদেশে হ্যাম হতে চাইলে কি করতে হয় সেটা জেনে নেয়া যাক।
আগেই বলেছি, হ্যাম হতে লাইসেন্স লাগে। আমাদের দেশে সেই লাইসেন্স দেয় ‘বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন’ বা বিটিআরসি। বিটিআরসি ‘অ্যামেচার রেডিও সার্ভিস’ নামের একটা পরীক্ষা নেয়। যারা পরিক্ষায় পাস করে তাদের প্রত্যেককে লাইসেন্স এবং ইউনিক কল সাইন দেয়া হয়। বাংলাদেশের সবশেষ পরক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৭ সালের ১৯ আগস্ট। প্রায় ২১০ জন আগ্রহী পরীক্ষায় অংশ নেন এবং ১৭৭ জন পাস করেন। আশা করা যাচ্ছে প্রতি বছর এই পরীক্ষা নেয়া হবে।
তাই তোমরা যারা হ্যাম হতে চাও তারা একটু আদটু পড়াশোনা শুরু করে দাও।
তোমরা যারা এই পর্যন্ত পড়েছ তাদের মজার একটি তথ্য জানিয়ে দেই, কিছুদিন আগে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের যেই প্রথম ‘ন্যানো স্যাটেলাইট’ ব্র্যাক অন্নেষা মহাকাশে পাঠায় সেই স্যাটেলাইট কিন্তু পৃথিবীতে তথ্য পাঠায় এই একই রেডিও মাধ্যমে। তাই তোমাদের কেউ যদি স্যাটেলাইট নিয়ে কাজ করতে চাও তবে তোমরা অবশ্যই হ্যাম লাইসেন্স নিয়ে রাখবে।
শুভেচ্ছা সবাইকে।
কাঁচা হাতে অল্প বিদ্যায় লেখা। ভুল-ভ্রান্তি নিশ্চয়ই আছে। শুধরে দেবার অনুরোধ থাকলো।
কিংশুক
২০১৭ ডিসেম্বর ০৬ শাহজাহানপুর ০৬০৫
references:
https://www.barl.org/
https://en.wikipedia.org/wiki/Amateur_radio
http://www.btrc.gov.bd/amateur-radio
3 টি মন্তব্য:
আমি হ্যাম লাইসেন্সের জন্য পরিক্ষা দিতে চাই । কিভাবে প্রস্তুতি নিবো বা কি নিয়ে বা কোন বইটা পড়বো সাজেসন দেবেন কি ?
আমি হ্যাম লাইসেন্সের জন্য পরিক্ষা দিতে চাই । কিভাবে প্রস্তুতি নিবো বা কি নিয়ে বা কোন বইটা পড়বো সাজেসন দেবেন কি ?
https://www.channelionline.com/ham-radio-test-will-be-on-may-13/
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন