নীল হিমুর প্রহর - পর্ব ০৮ - শেষ উপাখ্যান
বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে।
বৃষ্টির ছিটা আমার মুখে এসে লাগছে। আমার ঘুম ভেঙ্গেছে শীতল মেঘের জলের স্পর্শ্বে।
হাল্কা শীত শীত করছে। খাটের উপর একটা কাথা থাকার কথা। সুন্দর ছবি আঁকা কাঁথার উপর। রুপা শখ করে বুনেছিল আমার জন্য। ইদানিং ঢাকার মেয়েরা ঢং আর নেকামি ছাড়া তেমন কিছু পারে না। রুপা অন্যরকম মেয়ে। যাই হোক আমি কাঁথাটা পাচ্ছি না। বালিশটাও নিখোঁজ। কাল রাতে চুরি হয়েছে। জানালা খোলা পেয়ে ঢুকে গেছে। ঘরের ভেতর কাথা আর বালিশ ছাড়া নেয়ার মত কিছু না পেয়ে সম্ভবত চোর হতাশ হয়েছে।
ঘরের ভেতরে ইউরিয়ার গন্ধ। হতাশা থেকেই চোর এই কাজ করেছে।
বৃষ্টি কমেছে কিন্তু থামেনি। আমি নীল পাঞ্জাবী টা গায়ে জড়িয়ে বের হয়েছি। হালকা বৃষ্টির মধ্যে হাঁটছি। হঠাৎ একটা চিপা গলির মধ্যে থেকে একটা সূক্ষ্ণ সুর ভেসে আসছে বলে মনে হল। আমি গলিতে উঁকি দিলাম। কিছুটা সামনেই একটা চায়ের দোকান। গান সেখান থেকেই আসছে। খুব পরিচিত গান,
আমি বলে উঠলাম, বাকের ভাই, আমাকে চিনেছেন?
-কি রে হিমু কেমন আছিস?
- জি বাকের ভাই,ভালো। আপনার অবস্থা কি?
-এইতো ভালোই আছি। গান শুনছি।
আমাকে একটা এমপি থ্রি দেখালো।
-বুঝলি হিমু, জিনিসটা ভালো। মীরা কিনে দিয়েছে।
-বাহ, ভালোই তো।
- তা কই যাচ্ছিস তুই? দিনের বেলায় তো তোর বাইরে থাকার কথা না। তোর বের হয়ার সময় তো রাত। নিশিথের আধারে; হিমু যায় আহারে।
- ইদানিং রাতে কম বের হই। বয়স হয়ে যাচ্ছে।
- হাহাহা!!! তাই নাকি। তা তোর রুপার খবর কি?
- সে বৈদেশ। ডাক্তার স্বামীর ধরে চলে গেছে আরো এক যুগ আগে।
- অ আচ্ছা। ভালই করেছে। তোর সাথে থাকলে তো কাউকে মুখ পর্যন্ত দেখাতে পারতো না বেচারি। এখন তাও একটা পরিচয় আছে।
- তা ঠিক।
আমি চলে এলাম। বাকের ভাই একের পর এক চা খেয়েই যাচ্ছেন।
হাঁটতে হাঁটতে রমনার দিকে চলে এসেছি। এখন আর বৃষ্টি পড়ছে না।
আমি ভেজা রাস্তায় হাটছি। সবুজ গাছ দেখতে ভালো লাগছে। রাস্তায় খুব বেশি মানুষ নাই। বৃষ্টি বলে কপোত-কপোতিদের আসরও সেভাবে জমে নাই। আমি নিজ মনে হেটে যাচ্ছি। হঠাৎ একটা বাচ্চা মেয়ে আমার কাছে ছুটে এলো। হাঁপাতে হাঁপাতে জিজ্ঞেস করলো,
- Are you Himu?
- Yes
- Do you know Rupa?
- Yes
- I'm Puti. Her daughter.
- good
মেয়েটা আমার হাতে একটা কাগজের টুকরো গুজে দিয়ে দ্রুত চলে গেলো। কাগজের টুকরোতে কিছু লেখা আছে বলে মনে হচ্ছে। এখন পড়া ঠিক হবে না। চিঠি পড়ার কিছু নিয়ম কানুন আছে। পাঞ্জাবীর পকেট নাই বলে আমি কাগজের টুকরোটা হাতে মুড়ে নিয়েই হাঁটতে থাকলাম।
আচ্ছা, রুপা কি স্বপরিবারে দেশে এসেছে? তার ডাক্তার স্বামী কে নিয়ে সে তার কন্যাকে স্বদেশ ভ্রমণে এনেছে? কন্যা কি আমার কথা জানে? নাকি রুপা আমার সাথে যোগাযোগের জন্য তাকে ব্যবহার করছে?
আমি হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। যৌবনে অনেক হাঁটতে পারতাম। হিমু হবার অক্লান্ত পরিশ্রম করেছি। জানি না কতটা হতে পেরেছি।
আমি নীল হিমু নই। আমি কিংশুক। আমি চেয়েছিলাম হিমু হতে। পারি নি। আমি রুপার প্রেমে পড়েছিলাম।
আরো অনেক কিছুতে ব্যর্থ হয়েছি। আমি শেষ পর্যন্ত হিমু হতে পারি নি।
আজ থেকে নীল হিমুর প্রহর এর আর কোনো নতুন অধ্যায় লেখা হবে না।
নীল হিমুর অষ্ট প্রহর এর ইতি।
দিন শেষে আমরা সবাই হিমু হতে চাই।
[[সমাপ্ত]]
[[[কিংশুক২০১৫অক্টোবর১০শান্তিবাগ,ঢাকা১৬৪১]]]
বৃষ্টির ছিটা আমার মুখে এসে লাগছে। আমার ঘুম ভেঙ্গেছে শীতল মেঘের জলের স্পর্শ্বে।
হাল্কা শীত শীত করছে। খাটের উপর একটা কাথা থাকার কথা। সুন্দর ছবি আঁকা কাঁথার উপর। রুপা শখ করে বুনেছিল আমার জন্য। ইদানিং ঢাকার মেয়েরা ঢং আর নেকামি ছাড়া তেমন কিছু পারে না। রুপা অন্যরকম মেয়ে। যাই হোক আমি কাঁথাটা পাচ্ছি না। বালিশটাও নিখোঁজ। কাল রাতে চুরি হয়েছে। জানালা খোলা পেয়ে ঢুকে গেছে। ঘরের ভেতর কাথা আর বালিশ ছাড়া নেয়ার মত কিছু না পেয়ে সম্ভবত চোর হতাশ হয়েছে।
ঘরের ভেতরে ইউরিয়ার গন্ধ। হতাশা থেকেই চোর এই কাজ করেছে।
বৃষ্টি কমেছে কিন্তু থামেনি। আমি নীল পাঞ্জাবী টা গায়ে জড়িয়ে বের হয়েছি। হালকা বৃষ্টির মধ্যে হাঁটছি। হঠাৎ একটা চিপা গলির মধ্যে থেকে একটা সূক্ষ্ণ সুর ভেসে আসছে বলে মনে হল। আমি গলিতে উঁকি দিলাম। কিছুটা সামনেই একটা চায়ের দোকান। গান সেখান থেকেই আসছে। খুব পরিচিত গান,
হাওয়া মে উড়তা যায়ে, মেরা লাল দোপাট্টা মাল মাল কে, হো জি, হো জিআরে, বাকের ভাইয়ের গান দেখি। আমি দ্রুত পায়ে চায়ের দোকানে গেলাম। উঁকি মেরে দেখি বাকের ভাই চাইয়ের কাপে চুমুক দিচ্ছেন।
আমি বলে উঠলাম, বাকের ভাই, আমাকে চিনেছেন?
-কি রে হিমু কেমন আছিস?
- জি বাকের ভাই,ভালো। আপনার অবস্থা কি?
-এইতো ভালোই আছি। গান শুনছি।
আমাকে একটা এমপি থ্রি দেখালো।
-বুঝলি হিমু, জিনিসটা ভালো। মীরা কিনে দিয়েছে।
-বাহ, ভালোই তো।
- তা কই যাচ্ছিস তুই? দিনের বেলায় তো তোর বাইরে থাকার কথা না। তোর বের হয়ার সময় তো রাত। নিশিথের আধারে; হিমু যায় আহারে।
- ইদানিং রাতে কম বের হই। বয়স হয়ে যাচ্ছে।
- হাহাহা!!! তাই নাকি। তা তোর রুপার খবর কি?
- সে বৈদেশ। ডাক্তার স্বামীর ধরে চলে গেছে আরো এক যুগ আগে।
- অ আচ্ছা। ভালই করেছে। তোর সাথে থাকলে তো কাউকে মুখ পর্যন্ত দেখাতে পারতো না বেচারি। এখন তাও একটা পরিচয় আছে।
- তা ঠিক।
আমি চলে এলাম। বাকের ভাই একের পর এক চা খেয়েই যাচ্ছেন।
হাঁটতে হাঁটতে রমনার দিকে চলে এসেছি। এখন আর বৃষ্টি পড়ছে না।
আমি ভেজা রাস্তায় হাটছি। সবুজ গাছ দেখতে ভালো লাগছে। রাস্তায় খুব বেশি মানুষ নাই। বৃষ্টি বলে কপোত-কপোতিদের আসরও সেভাবে জমে নাই। আমি নিজ মনে হেটে যাচ্ছি। হঠাৎ একটা বাচ্চা মেয়ে আমার কাছে ছুটে এলো। হাঁপাতে হাঁপাতে জিজ্ঞেস করলো,
- Are you Himu?
- Yes
- Do you know Rupa?
- Yes
- I'm Puti. Her daughter.
- good
মেয়েটা আমার হাতে একটা কাগজের টুকরো গুজে দিয়ে দ্রুত চলে গেলো। কাগজের টুকরোতে কিছু লেখা আছে বলে মনে হচ্ছে। এখন পড়া ঠিক হবে না। চিঠি পড়ার কিছু নিয়ম কানুন আছে। পাঞ্জাবীর পকেট নাই বলে আমি কাগজের টুকরোটা হাতে মুড়ে নিয়েই হাঁটতে থাকলাম।
আচ্ছা, রুপা কি স্বপরিবারে দেশে এসেছে? তার ডাক্তার স্বামী কে নিয়ে সে তার কন্যাকে স্বদেশ ভ্রমণে এনেছে? কন্যা কি আমার কথা জানে? নাকি রুপা আমার সাথে যোগাযোগের জন্য তাকে ব্যবহার করছে?
আমি হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। যৌবনে অনেক হাঁটতে পারতাম। হিমু হবার অক্লান্ত পরিশ্রম করেছি। জানি না কতটা হতে পেরেছি।
আমি নীল হিমু নই। আমি কিংশুক। আমি চেয়েছিলাম হিমু হতে। পারি নি। আমি রুপার প্রেমে পড়েছিলাম।
আরো অনেক কিছুতে ব্যর্থ হয়েছি। আমি শেষ পর্যন্ত হিমু হতে পারি নি।
আজ থেকে নীল হিমুর প্রহর এর আর কোনো নতুন অধ্যায় লেখা হবে না।
নীল হিমুর অষ্ট প্রহর এর ইতি।
দিন শেষে আমরা সবাই হিমু হতে চাই।
[[সমাপ্ত]]
[[[কিংশুক২০১৫অক্টোবর১০শান্তিবাগ,ঢাকা১৬৪১]]]
0 টি মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন