নীল হিমুর প্রহর - পর্ব ০৫

২:২৬:০০ PM Kingshuk 0 Comments

আজ ঈদ। ঈদুল ফিতর।


সকাল থেকে ভারি বর্ষণ হচ্ছে। রোজার ঈদের সন থেকে প্রধান আকর্ষন হচ্ছে ঘুরাঘুরি। কিন্তু
বৃষ্টির জন্য বের হতে পারছে না কেউ। সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে তরুন-তরুনীদের। বছরের এইরকম বিশেষ কয়েকটি দিন এই তারা বিশেষ সাক্ষাৎ করে থাকে। কিন্তু তার মধ্যা একটা দিন বাদ পড়লে ব্যপারটা খারাপই হয়।
মাঝে মাঝে প্রকৃতির লীলা খেলা আমার মনে বিস্ময় সঞ্চার করে। যেই বৃষ্টি রোমান্টিকতার চরম মুহূর্ত উপহার দিতে পারে, যেই বৃষ্টি কবির মনে উত্থাল পাতল সৃষ্টি করে, সেই একই বৃষ্টি অনেক সময় প্রেমের ঘোর বিরুদ্ধাচারী।
আমি হিমু। ঠিক হিমু নই। হিমু হওয়ার প্রচেষ্টায় আছি। সরাসরি হিমুর সব কিছু হুবাহু ফলো করি তেমন না। মোটামুটি মডিফাইড হিমু বলা যায়।
তবে হিমুর মত আমারও রুপা আছে। কিন্তু হিমু ফোন নামক যন্ত্র খুব একটা পছন্দ করে না কিন্তু আমি নিয়মিত মোবাইল ফোন ব্যবহার করি। আবার আরেকটা বিশেষ অমিল হচ্ছে আমি নীল পাঞ্জাবী পড়ি কিন্তু হিমু পড়তো গাউছিয়া থেকে কেনা হলুদ পাঞ্জাবী। যাই হোক আমি মডিফাইড হিমু হিসেবে বেশ আরামেই আছি। তবে সম্ভবত হিমুর রুপা হিমুর সমস্যাগুলো ধরতে পারতো কিন্তু আমার রুপা তা পারে না। সে আমাকে আট-দশ জন ‘সুস্থ’ মানুষ হিসেবেই চায়। তবে আমি হিমু না হতে পারি কিন্তু সম্পূর্ণ সুস্থ নই। মাথায় যথেষ্ট সমস্যা আছে।
যাই হোক। যারা আমাকে অর্থাৎ নীল হিমু কে আগে থেকে চেনেন তাদের জন্য সামান্য কিছু কথা বললাম আরকি। অনেক টা FAQ এর মত।
এখন আজকের দিনের কথায় আসা যাক।
রুপা আমাকে বলেছিল আজ দেখা করবে। আমিও খুশি মনে আমার নীল পাঞ্জাবী বের করে ইস্ত্রি করা শুরু করলাম। রুপা আমাকে যেসমস্ত জায়গায় নিয়ে যায় সেখানে আইরোন করা জামা না পরে গেলে অনেকেই বিরুপ দৃষ্টি দেয়। একদিন তো আমাকে প্রায় গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে নিয়েছিল। আমি যখন ধাক্কা খেয়ে এক গাল হাসি সমেত বের হচ্ছি তখন রুপা এসে আমাকে উদ্ধার করেছে।
ইস্ত্রি করা নীল পাঞ্জাবী গায়ে জরিয়েই আমি রুপা কে ফোন দিলাম। সে ফোন ধরে কাদো কাদো গলায় বললো তার চোখের কাজল হারিয়ে গেছে। ঈদ উপলক্ষে দামী ব্রান্ড এর কাজল কিনেছিল সে। আমি বললাম পুরনো কাজল দিতে। এ কথা শুনে সে সম্ভত খানিকটা আহত হলো। সে ভেবে বসলো আমি তাকে অপমান করার জন্য এধরনের কথা বলেছি। আমি আমার পুরনো নীল পাঞ্জাবী পড়ে ঈদের দিন যদি বের হতে পারি তবে সামান্য কাজল কেনো সে পুরনো টাই ব্যবহার করতে পারবে না ভেবে পেলাম না। সে রীতিমত ঘ্যানর ঘ্যানর শুরু করে দিল। আমি এক পর্যায়ে বলেই বসলাম এসব অহতুক ফালতু প্যাচাল শুনতে ভালোলাগতেছে না। সে অত্যন্ত ক্রোধান্বিত কণ্ঠে বাই বলেই রেখে দিল।
তারপর মোটামুটি অর্ধশত কল তাকে করেছি কিন্তু সে ধরছে না। সে বালিশ চেপে কাঁদছে এই ব্যপারটা পরিষ্কার। আমি এখন নিরুপায়।
ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে। আমি নীল পাঞ্জাবী গায়ে নগ্ন পায়ে ঢাকার রাজপথে হাঁটছি। শাহবাগে যাব। কিছু টকটকে লাল ফুল কিনতে হবে কিন্তু লাল ফুলের নাম মনে পরছে না। সম্ভবত গোলাপ ছাড়া আর কোনো ফুলের রঙ লাল হয় না। ঈদের দিনে শাহবাগের ফুলের দোকান খোলা পাবো কিনা কে জানে। শাহবাগের ফুলের দোকানিরা মানুষের বিশেষ দিন গুলো তে সাহায্য করে। আজকে ঈদ। একটা বিশেষ দিন। সে হিসেবে দোকান খোলা। আবার উলটা যুক্তিও গ্রহণযোগ্য। সারাবছর সর্বসাধারনের বিশেষ দিন আরো বিশেষ করতে করতেই কেটে যায় তাদের। তাদেরও অধীকার আছে এক দু দিন নিজের বউ ছেলেমেয়ে নিয়ে থাকার। একটা কাজই করা যায়, শাহবাগে গিয়ে নিজে দেখাদু একজনের ফোন নাম্বার নিয়ে আসা দরকার। মানুষের কোন কিছুর চাহিদা একবার হলে তা আর থামে না। ব্যপক সম্ভাবনা যে আমার এর পর থেকে প্রায়শই ফুল কেনা লাগবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে তারা আমাকে ফোন নাম্বার দেবেন কিনা।
আরে লাল ফুলের নাম মনে পড়েছে। কৃষ্ণচূড়া, পুলাশ, শিমুল, জবা... একবার কোনো কিছু মনে পড়লে একের পর এক মনে পড়তেই থাকে।


দুপুর ১ টার মত বাজে।
আমি দাঁড়িয়ে আছি রুপার বাসার সামনে। আমার হাতে হরেক রকম লাল ফুলের বিশাল তোরা। ফুলের তোরা না বলে ফুলের ঝোপঝাড় বলাই শ্রেয়। রুপা কে আমি ফোন করেই যাচ্ছি। সে ধরছে না। বৃষ্টি থেকে এখন খটখটে রোদ উঠেছে। আমি রোদের তাপে দাহ হচ্ছি আর অপেক্ষা করছি। আমার সাথে তাপদাহ ভোগ করছে আমার হাতের ফুলের ঝোপঝাড়, সেও বোধ করি অপেক্ষা করছে। কিন্তু আমরা কেউই জানি না এই তিতিক্ষার ইতি কোথায়।

[এই খানে গল্পটা শেষ না। কিন্তু আমার মৃত্যু ভয়ে বাকি অংশ লিখতে পারছি না। যারা বিগতে আমার সাথে থেকেছেন তারা খানিকটা আন্দাজ করেতে পারছেন বলে আমার বিশ্বাস।]

মানুষ অপেক্ষা করে। অপেক্ষা করে এমন কিছুর জন্য যার কোন সীমানা নাই। অসীমের প্রতিই মানুষের আগ্রহ।

[[কিংশুক২০১৫জুলাই১৮সিরাজগঞ্জ১৩২৭]]