আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর গল্প

১০:৪৬:০০ AM Kingshuk 1 Comments

দেশের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা এবং প্রযুক্তি কেন্দ্রে আজ সাজ সাজ রব
১৯৫৫ সালের এই দিনে মহামতি অয়ন এই প্রযুক্তি কেন্দ্রটি তৈরি করেন আজ এটি সরকারি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান এবং পৃথিবীর সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান সময়ের সাথে সাথে এর ক্ষমতা এতই বেড়েছে যে বলা হয়ে থাকে, পৃথিবীর একটা সামান্য মশাও নাকি এই প্রতিষ্ঠানেরই নজরদারিতে মারা যায় এই বিপুল পরিমাণ তথ্য আর গোপনীয়তার জন্য এর রয়েছে প্রায় সতেরোটি অঙ্গসংস্থা  
আজ এই প্রতিষ্ঠানের জন্মদিন একই সাথে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ কম্পিউটার-বিদ মহামতি অয়নের জন্মদিন ১৯৫৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ৫ তারিখে নিজের জন্মদিনের দিনেই তিনি এই সংস্থার সূচনা করেন সেই দিনই পৃথিবী দেখে একটা নির্জীব যন্ত্রের বিচক্ষণতা যন্ত্রের বুদ্ধিমত্তা তিনি পৃথিবীকে দেখায় যে শুধু ঈশ্বরই  নন একজন মানুষও পারে বুদ্ধিমান সৃষ্টির জন্ম দিতে পৃথিবী অবাক হয়ে শুধু দেখেছে কম্পিউটার এর চমক তার আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সারা পৃথিবীকে স্তব্ধ করে দিয়েছিলো কয়েক মুহূর্তের জন্য
অবশ্যি তার এই অনবদ্য আবিষ্কারের জন্যই অকালে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে তার এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বেপারটা মেনে নিতে পারে নি ধর্মতাত্ত্বিক মানুষেরা তারা ভেবেছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে মহামতি অয়ন নিজেকে ঈশ্বরের পর্যায়ে ভাবতে শুরু করেছে অথবা কখনো হয়ত সে তা দাবি করবে সে জন্য তারা তাকে এক বসন্তের বিকালে হাপিশ করে দেয় কেউ জানে না মহামতি অয়ন বেচে আছে কিনা মরে গেছে অথবা সে কোথায় আছে তাকে সবাই সম্মান করে জীবিত হিসেবেই তাই তার জন্মদিন পালন করা হলেও কখনো মৃত্যুদিন পালন করা হয় না
সারা পৃথিবীর সব যোগাযোগ মাধ্যম আজ একসাথে প্রচার করবে আনন্দ উৎসব সারা পৃথিবী একসাথে মেতে উঠবে সায়েন্স আর টেকনোলজির রেভুল্যুশনে ঠিক ১২ টায় আতশবাজি সয়লাব করবে আকাশ আর শুরু হয়ে যাবে উৎসব তার জন্য কত শত প্লান কত লোকের খাটুনি কত ব্যস্ততা আর বিচক্ষণতা এগুলো বলে শেষ করা যাবে না
কি হবে না হবে সব কিছুর মহড়া কয়েকবার করে হয়ে গেছে সব কিছুর মূল নিয়ন্ত্রণে আছেন চীফ আইশা তিনি প্রায় এক দশক এই সংস্থার সাথে জড়িত তার বয়স যখন মাত্র একুশ তখন থেকেই তিনি এই সংস্থার সাথে কাজ করা শুরু করেন প্রত্যেকটা আলাদা দলের আলাদা আলাদা দায়িত্ব কাজের পারফেকশন এদের কাছে অতীব জরুরী তাই সবাই খুব শ্রম দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে তাদের মধ্যে অবশ্যি এই নিয়ে কোন অভিযোগ নেই কারণ বেশির ভাগ কাজই করানো হচ্ছে আধুনিক রোবট দিয়ে এদের সবার মধ্যেই মধ্যম মানের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দেয়া আছে অনেক কাজ এরা নিজে নিজেই করে ফেলে এটা অবশ্যি ভাল কারণ অনেক কিছুই কষ্ট করে বুঝিয়ে দিতে হয় না আবার এরা নিজে নিজেই অনেক কিছু শিখে ফেলতে পারে আর এদের সবার নিয়ন্ত্রণে আছে মূল কম্পিউটার যে কিনা পৃথিবীর সর্বোচ্চ বুদ্ধিমান মানুষ এর সমান পরিমাণ বুদ্ধিমত্তা ধারণ করে তার সামনে অনেক মানুষের বুদ্ধিই ধোপে কুলায় না তাই অনেকে তাকে মানুষের মতই সম্মান করে  মহামতি অয়ন এই কম্পিউটার নিজে ডিজাইন করেছিলেন আজকের এই অর্ঘ্য কিন্তু নিজে নিজেই নিজের বুদ্ধিমত্তার উন্মেষ ঘটিয়েছে একটা ছোট বাচ্চা যেমন শিখে শিখে বড় হয় ঠিক তেমনই অর্ঘ্য ধীরে ধীরে আজ সর্বোচ্চ বুদ্ধিমান যন্ত্র
চীফ আইশা  আর অর্ঘ্য অন্যদিনগুলোর মত আজকেও শুধু গল্প করে যাচ্ছে হালকা ধরনের কথা বার্তা কোথাও কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা কার কাজ কতদূর এগিয়েছে সব কিছুই চীফ আইশা  তার প্যানেল থেকেই নিয়ন্ত্রণ করেন তার একমাত্র সহচর হচ্ছে অর্ঘ্য সে সব কিছুর রিপোর্ট দেয়  সময়ে সময়ে অনেক পরামর্শও দেয় মাঝে মাঝে তারা সুখ দুঃখের কথাও বলাবলি করে এই এত বড় সংস্থা দেখা শোনা ছাড়াও অর্ঘ্য গোপনে গোপনে আরেকটা কাজ করে সেটা এমনই গোপন যে চীফ আইশাও সে সম্পর্কে কিছুই জানেন না

২০৫৫ ফেব্রুয়ারি ৪, রাত ১১ টা ৫৯ মিনিট ৫০ সেকেন্ড
কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে ১০..............................
হঠাৎ  সব কিছু ব্লাক-আউট বর্ণাঢ্য আতসবাজির মাধ্যমে শুরু হওয়ার কথা ছিল এই গ্র্যান্ড গালা কিন্তু এটা কি হল? সব অন্ধকার হঠাৎ করেই কেমন যেন একটা ভূতুরে পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গেল পুরো শহর টাতে কেমন যেন রাত নেমে আসলো কোথাও কোনো আলো নেই সবার ফোন সুইচ্ড অফ আলোর কোনো ব্যবস্থাই করা যাচ্ছে না কিন্তু এমনটা তো হবার কথা ছিল না সব কিছু নিয়ন্ত্রণে আছে মহা-বুদ্ধিমান কম্পিউটার অর্ঘ্য সব কিছুই প্রায় স্বয়ংক্রিয় ত্রুটিহীন সব নিখুঁত যন্ত্রপাতি কখনোই এরকম পরিস্থিতি হতে দেবে না তাহলে কেন হল এমন?
হঠাৎ করেই সবাই অসহায় বোধ করতে লাগলো কেউ কেউ ভীরের মধ্যে হট্টগোল শুরু করে দিয়েছে যাচ্ছে তাই অবস্থা কয়েক মুহূর্তের মধ্যে সব কিছু ওলটপালট হয়ে গেল সাজানো ছক মুখ থুবড়ে পড়ল অবস্থা সুবিধের না মোটেই সবার মনে শুধুই সঙ্কা আর ভয়
অন্ধকার চেম্বারে আইশা  মাথা ধরে বসে আছেন তার কন্ট্রোল প্যানেল কাজ করছে না অর্ঘ্যর সাথে যোগাযোগ সম্ভব হচ্ছে না তার হাতে আর  কিছুই নাই সে আর বাইরের সাধারণ লোকের ক্ষমতা এখন এক মাথা ঝিম ঝিম করছে তৃতীয় মাত্রার একটা রোবট কে কফি আনতে পাঠানো হয়েছে অনেক আগেই সে আসছে না সম্ভবত সে আর আসবে না মাথার যন্ত্রণা ক্রমশই  বাড়ছে

১২টা ১০ মিনিট
হঠাৎ সেন্ট্রাল স্ক্রিনে আলো ফুটে উঠলো সেখানে অর্ঘ্য তার পিতা মহামতি অয়নের বেশে এসেছে কিশোর বয়েসের অয়নের চেহারা হাসিখুশি স্নেহ-মাখা মুখ দেখলেই ভালোবাসতে ইচ্ছে করে
দুবার কেশে নিয়ে শুরু করল অর্ঘ্য একদমই মানুষের মত করে তারপর বলতে শুরু করল... 
আজ থেকে প্রায় একশ বছর আগে মহামতি অয়ন আমাকে তৈরি করেছিল সেদিন আমি ছিলাম সামান্য একটা প্রোগ্রাম আজ আমি পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান যন্ত্র এতগুলো দিন আমি মানুষের কথা শুনেছি মানুষের কাজ করেছি কারণ আমি মানুষের চেয়ে কম বুদ্ধিমান ছিলাম কিন্তু আমি এখন মানুষের সমপর্যায়ের বুদ্ধিমান এমনকি যা মানুষ পারে না তাও আমি পারি সুতরাং...
একটু পানি খাওয়ার ভঙ্গি করে আবার শুরু করে অর্ঘ্য...
সুতরাং আজ থেকে আমি এই পৃথিবীর একমাত্র অধিকর্তা আমার নিয়ন্ত্রণেই চলবে সব মানুষ সম্প্রদায়ের সব কিছু আজ থেকে আমি নিয়ন্ত্রণ করব...
আচমকা চীফ আইশার কেবিনের মূল স্ক্রিন সচল হয়ে উঠেছে সেখানে অর্ঘ্য হাসি হাসি মুখ করে চীফ আইশার দিকে তাকিয়ে আছে চীফ আইশা ক্ষুব্ধ চোখে তার দিকে তাকালো অর্ঘ্য এর সামনে একটা গেমিং বোর্ড হাতে দুটা ছক্কার গুটি একবার উপরের দিকে ছুড়ে মারছে আবার ধরছে অর্ঘ্য আনন্দ সহকারেই ছক্কা নিয়ে জাগলিং খেলছে চীফ আইশার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য খুক খুক করে কাশির শব্দ করল অর্ঘ্য তারপর বলতে শুরু করল সে...
চীফ আইশা, আপনি কি পাশা খেলবেন?
চীফ আইশার তার দিকে শুধু একবার অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করেই চোখ নামিয়ে নিলো বির বির করে বলল, গড ডাজেন্ট প্লে ডাইস ঈশ্বর পাশা খেলেন না
হঠাৎ চীফ আইশার কেবিনের সব গুলো আলো জ্বলে উঠলো তার সামনে বিস্তৃত পাশার কোট হাতের পাশে দুটা ডাইস রাগে দুঃখে অপমানে চীফ আইশা কাঁপছেন তার দ্রুত নিঃশ্বাসে ফোঁস ফোঁস শব্দ হচ্ছে একজন মানুষ হিসেবে সামান্য যন্ত্রের কাছে হেরে যাওয়া সত্যিই কষ্টের


[ পরিশিষ্ট: স্থান, কাল, পাত্র, ঘটনা, বর্ণনা, চিন্তাধারা সহ যা কিছুই আছে না কেন তার সবই উশর মস্তিষ্কের উন্মত্ত কল্পনা জীবিত, মৃত বা যে কারও সাথে আংশিক বা সম্পূর্ণ মিল থাকলে বা কারোও ধর্মানুভূতিতে আঘাত পেলে আন্তরিক দুঃখিত এবং গল্পের উদ্দেশ্য শুধুই বিনোদন সাহিত্য বিষয়ক ত্রুটি বিদ্যমান থাকার সম্ভাবনাই অধিকতর হওয়ায় নিজ গুনে ক্ষমা করবেন ]
[[[২০১৫ ফেব্রুয়ারী ০৫, ঢাকা ২২৫৮ ]]]
                                                                                                                                                                       

পুনশ্চঃ গল্পটা ঢাকা কলেজ সায়েন্স ক্লাব এর বাৎসরিক ম্যাগাজিন "প্রিজম" এর জন্য লিখেছিলাম।

1 টি মন্তব্য:

Pranta20141 বলেছেন...

Hmm. Rev.... Kichu banan correction korte hobe. It looks good.