প্রতিলোম বিশ্বাস - পর্ব ০১
প্রতিলোম বিশ্বাস - পর্ব ০১
-----------------------------
আমি যখন ক্লাস নাইনে পড়ি তখন জানতে পারি যে আমার প্রিয় হুমায়ুন আহমেদ আর জাফর ইকবাল দুইজনই ঢাকা কলেজের ছাত্র ছিলেন। তার আগ পর্যন্ত মোটামুটি বলা যায় কলেজ বলতে শুধু নটরডেম কলেজ কেই চিনতাম। আমি ব্যক্তিগত জীবনে হুমায়ুন আহমেদ কে গুরু হিসেবে মানি। আমার লেখালেখির অনুপ্রারণাও তিনি। তাই সেদিন থেকে মনে প্রানে ঢাকা কলেজে পড়ার পরিকল্পনা করি। কিন্তু বাস্তবতা নির্মম। এস এস সি পরীক্ষার পর বুঝতে পারি সমাজে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের একটা বিশেষ অবস্থা আছে যা অত্যন্ত নেতিবাচক। কিন্তু হাল ছাড়ি নি। মায়ের ইচ্ছার কারনে যদিও নটরডেম এ ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলাম কিন্তু ঈশ্বর আমার দোয়া কবুল করেছিলেন। বহু সমস্যার মধ্যে দিয়ে গিয়েছিলাম বটে কিন্তু দিন শেষে আমি ঢাকা কলেজের ছাত্র।
ভর্তি হবার সময় মানুষের নানা রকম কথা শুনেছিলাম। বিশেষত পলিটিক্স, ক্লাস এর বাজে পাঠ, নিয়ম-শৃংখলা ইত্যাদি। কিন্তু আমি নিজে যা দেখলাম তা সম্পুর্ণ বিপরিত।
ঠিকঠাক মতই ক্লাস হয়। ক্যম্পাসে কোনো রাজনৈতিক সমস্যা নাই। আর টিচারদের পড়ানোর ব্যপারটা না হয় নাই বা বললাম। অসাধারন তাদের সবকিছু।
প্রতিদিন না হোক কিন্তু নিয়মিত ক্লাসে যেতাম। ভোর বেলা উঠে দৌড় দিতাম। কলেজ বাসে যেতাম। কলেজ শেষে কলেজের বাসেই ফিরতাম। কলেজ বাসে সাধারনত খুব ভীর থাকে। তবে খুব মজাও হয়।
তো একদিন রাতে, কম্পিউটার বন্ধ করে ঘুমাতে যাবো হঠাৎ কেমন জানি খারাপ লাগছিলো। সারাদিন অনেক ধকল গেছে তাই হয়তো এরকম লাগছে। তাই আর দেরি না করে ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরদিন যথারীতি ভোরে উঠে বাস ধরার জন্য দৌড় দিলাম। আমি আর বাস প্রায় একই সময় স্ট্যন্ডে পৌছালাম। ঘুম ঘুম চোখে বাসে উঠে দেখলাম ভেতরের দিকে দুইটা সিট ফাকা। আনন্দ চিত্তে চোখ ডলতে ডলতে সিটে যেয়ে বসলাম। শরীর দুর্বল। হালকা জ্বর ও ছিলো। বসা মাত্রই রাজ্যের ঘুম আমাকে গ্রাস করলো। আমি ঘুমিয়ে গেলাম।
ঘুম ভাংলো বিদ্যুৎ চমকানোর শব্দে। লাফ দিয়ে উঠে দেখলাম... যা দেখলাম তা আমি বিশ্বাস করতে পারি নি তখন। ভেবেছিলাম হয়তো ঘোর। কিন্তু কিছুক্ষনের মধ্যেই যুক্তিবাদি একজন মানুষের সব ক্যল্কুলেশন ফল করলো। অনাকাংক্ষিত বাস্তবা মানতে আমি বাধ্য হলাম।
আমি কলেজ বাসে বসা। কিন্তু কলেজে না। আশেপাশে অন্ধকার। সম্ভবত রাত। মাঝে মাঝে বিদ্যুতের আলোর ঝল্কানিতে আমি দেখলাম জায়গাটা মোটামুটি জংলা। বাসের ভেতর ছোট্ট একটা আলো আছে। কিন্তু বেশি কিছু দেখা যাচ্ছে না। বাসের দরজা লক করা। আমি অজ্ঞাত কোনো জায়গায় আটকা পড়ে গেছি।
কেন কখন কিভাবে কোথায় আসলাম সেসবের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছিলাম মনে মনে। কিন্তু খুব ভয় কাজ করছিলো বলে পারছিলাম না। মিসির আলির টেকনিক এপ্লাই করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছি কেবল। প্রচন্ড ঝড়ের শব্দের মাঝেও আমি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিলাম, কে যেনো দরজায় কড়া নড়ছে। আমি খুব কষ্টে শুধু বললাম, " কে?"
(চলবে...)
[[কিংশুক২০১৫আগস্ট১৩ঢাকা২২৫৪]]
-----------------------------
আমি যখন ক্লাস নাইনে পড়ি তখন জানতে পারি যে আমার প্রিয় হুমায়ুন আহমেদ আর জাফর ইকবাল দুইজনই ঢাকা কলেজের ছাত্র ছিলেন। তার আগ পর্যন্ত মোটামুটি বলা যায় কলেজ বলতে শুধু নটরডেম কলেজ কেই চিনতাম। আমি ব্যক্তিগত জীবনে হুমায়ুন আহমেদ কে গুরু হিসেবে মানি। আমার লেখালেখির অনুপ্রারণাও তিনি। তাই সেদিন থেকে মনে প্রানে ঢাকা কলেজে পড়ার পরিকল্পনা করি। কিন্তু বাস্তবতা নির্মম। এস এস সি পরীক্ষার পর বুঝতে পারি সমাজে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের একটা বিশেষ অবস্থা আছে যা অত্যন্ত নেতিবাচক। কিন্তু হাল ছাড়ি নি। মায়ের ইচ্ছার কারনে যদিও নটরডেম এ ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলাম কিন্তু ঈশ্বর আমার দোয়া কবুল করেছিলেন। বহু সমস্যার মধ্যে দিয়ে গিয়েছিলাম বটে কিন্তু দিন শেষে আমি ঢাকা কলেজের ছাত্র।
ভর্তি হবার সময় মানুষের নানা রকম কথা শুনেছিলাম। বিশেষত পলিটিক্স, ক্লাস এর বাজে পাঠ, নিয়ম-শৃংখলা ইত্যাদি। কিন্তু আমি নিজে যা দেখলাম তা সম্পুর্ণ বিপরিত।
ঠিকঠাক মতই ক্লাস হয়। ক্যম্পাসে কোনো রাজনৈতিক সমস্যা নাই। আর টিচারদের পড়ানোর ব্যপারটা না হয় নাই বা বললাম। অসাধারন তাদের সবকিছু।
প্রতিদিন না হোক কিন্তু নিয়মিত ক্লাসে যেতাম। ভোর বেলা উঠে দৌড় দিতাম। কলেজ বাসে যেতাম। কলেজ শেষে কলেজের বাসেই ফিরতাম। কলেজ বাসে সাধারনত খুব ভীর থাকে। তবে খুব মজাও হয়।
তো একদিন রাতে, কম্পিউটার বন্ধ করে ঘুমাতে যাবো হঠাৎ কেমন জানি খারাপ লাগছিলো। সারাদিন অনেক ধকল গেছে তাই হয়তো এরকম লাগছে। তাই আর দেরি না করে ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরদিন যথারীতি ভোরে উঠে বাস ধরার জন্য দৌড় দিলাম। আমি আর বাস প্রায় একই সময় স্ট্যন্ডে পৌছালাম। ঘুম ঘুম চোখে বাসে উঠে দেখলাম ভেতরের দিকে দুইটা সিট ফাকা। আনন্দ চিত্তে চোখ ডলতে ডলতে সিটে যেয়ে বসলাম। শরীর দুর্বল। হালকা জ্বর ও ছিলো। বসা মাত্রই রাজ্যের ঘুম আমাকে গ্রাস করলো। আমি ঘুমিয়ে গেলাম।
ঘুম ভাংলো বিদ্যুৎ চমকানোর শব্দে। লাফ দিয়ে উঠে দেখলাম... যা দেখলাম তা আমি বিশ্বাস করতে পারি নি তখন। ভেবেছিলাম হয়তো ঘোর। কিন্তু কিছুক্ষনের মধ্যেই যুক্তিবাদি একজন মানুষের সব ক্যল্কুলেশন ফল করলো। অনাকাংক্ষিত বাস্তবা মানতে আমি বাধ্য হলাম।
আমি কলেজ বাসে বসা। কিন্তু কলেজে না। আশেপাশে অন্ধকার। সম্ভবত রাত। মাঝে মাঝে বিদ্যুতের আলোর ঝল্কানিতে আমি দেখলাম জায়গাটা মোটামুটি জংলা। বাসের ভেতর ছোট্ট একটা আলো আছে। কিন্তু বেশি কিছু দেখা যাচ্ছে না। বাসের দরজা লক করা। আমি অজ্ঞাত কোনো জায়গায় আটকা পড়ে গেছি।
কেন কখন কিভাবে কোথায় আসলাম সেসবের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছিলাম মনে মনে। কিন্তু খুব ভয় কাজ করছিলো বলে পারছিলাম না। মিসির আলির টেকনিক এপ্লাই করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছি কেবল। প্রচন্ড ঝড়ের শব্দের মাঝেও আমি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিলাম, কে যেনো দরজায় কড়া নড়ছে। আমি খুব কষ্টে শুধু বললাম, " কে?"
(চলবে...)
[[কিংশুক২০১৫আগস্ট১৩ঢাকা২২৫৪]]
0 টি মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন