অতীশের অতশী – পর্ব দুই

১০:১৪:০০ PM Kingshuk 0 Comments



অতশীর শোবার ঘর টা বেশ বড়। 
ঘর ভর্তি নানা রকম শৌখিন জিনিসপত্র। কোনো টা বিলেত থেকে আনা আবার কোনো টা ভারতের ‘আনোখা চিজ’। 
বিশাল ব্যবসায়িদের অবস্থা মাঝে মাঝে রাজাদের চেয়েও ভালো থাকে। অতশীর ঠাকুরদাদা ভারতের অনেক বড় ব্যবসায়ি। জনশ্রুতি আছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যখন ভারত চুষে বেরিয়েছে তখন ও নাকি অদের ব্যবসা বেশ ভালো ছিলো। অতশীর বাবা জ্যোতিবাবু তার বাবার ব্যবসা শক্ত হাতে ধরেছেন। ব্যবসা ফুলে ফেপে আরো বড় হয়ে গেছে। তিনি পরিবার সহ বিলেতি সাহেবদের বিয়েতেও নিমন্ত্রণ পেয়ে থাকেন।
২৮ ক্যারেট সোনার চামচ মুখে ছুঁইয়ে জন্ম অতশীর। বড় হয়েছে টাকার সমুদ্রে। অভাব শব্দের সাথে সে মোটেও পরিচিত না। তার ধারনা প্রয়োজন পূরণের একমাত্র উৎস বরকত কাকু। তাকে বললেই হয়। সে এনে দেয়।
ছোট বেলা থেকেই ইংরেজী ইস্কুলে পড়া অতশীর মাঝে বাঙ্গালি স্বভাবের চেয়ে ইংরেজ স্বভাব অনেক বেশি। পোশাকআশাক অথবা চালচলন কথাবার্তা সবই বলতে গেলে ইংরেজদের মত।
অতশী আজ শোবার ঘর থেকে বের হয় নি। সকাল থেকে বিছানায় হেলান দিয়ে শুয়ে আছে। আজ তার জন্মদিন কিন্তু সে তার পছন্দের মানুষটার সঙ্গে থাকতে পারবে না। অভ্যেসটা যদিও বেশিদিনের নয়। তবুও কেমন করে যেন গেথে গেছে।
কলেজ পড়তে বিলেত গেছিলো অতশী। সেখানে একটা ছেলের সাথে তার ভাব হয়। তারা মোটামুটি দু বছর একে অন্যের সাথে থাকে। তারপর অতশী দেশে ফিরে আসে আর অতশীর বিলেতি বাবু সেখানে তার পৈত্রিক ব্যবসার দেখাশোনা শুরু করে।
যোগাযোগ বলতে যা আছে তা হচ্ছে টেলিগ্রাম। আজ এই মিটিং তো কাল সেই মিটিং। আজ অমুক দেশ তো কাল তমুক দেশ। বিলেতি বাবু ব্যস্ত থাকেন সবসময়। সপ্তাহান্তের টেলিগ্রাম তাই তার প্রায়শই মিস হয়। আগে দু সপ্তাহে একবার টেলিগ্রাম পাঠাতো অতশীর কাছে। কজের চাপে এখন তাও ভুলে যান মাঝে মাঝে। এখন ব্যবসার পিক পিরিয়ড। তাই ব্যস্ততা অনেক বেশি। গত চার মাসে একটাও টেলিগ্রাম পাঠাতে পারে নি অতশীর কাছে।
আজ অতশীর জন্মসিন কিন্তু বিলেতি বাবু না কোন গিফট পাঠিয়েছে না কোনো টেলিগ্রাম। অতশীর কান্না পাচ্ছে। খুব কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে এখনি মরে যেতে। হরি কে পানি আনতে বলেছিল সে। হরি বরফ কুচি দেয়া শীতল জলের পাত্র তার সামনে রেখেছে অনেক আগেই। কিন্তু অতশী একটা চুমুকও দেয় নি। এ তিয়াশা যে জলে মেটে না।
বিলেতি বাবুকে লিখার জন্য যে কাগজ নিয়েছিল সে তাতে বধহয় দু-এক বাক্যের বেশি লেখা হয় নি। অতশী সেই কাগজ হাতে তাদের দিঘির পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে। ষোড়শী কন্যার চোখের জলের মত বিভিষণ প্রকৃতি কম রেখেছে। অতশী আসতে আসতে জলে ডুপ দিলো। চোখের জলে আর দিঘির জলে একাকার হয়ে নবধারা এসে অতশীর বুকে ধরা কাগজটাকে ভিজিয়ে দিলো।

[[কিংশুক২০১৫জুলাই১৫সিরাজগঞ্জ১২১২]]